আজ আপনাদের সাথে আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে যাচ্ছি জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ সম্পর্কে। অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান কিভাবে জাপান ভিসা প্রসেস করা হয়। পৃথিবীর অনেকে ব্যক্তি প্রতি বছর জাপানে বিভিন্ন কাজের জন্য গিয়ে থাকে।
জাপান হল সূর্যোদয়ের দেশ এ দেশে যাওয়ার সকলেরই ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। জাপান আধুনিকতা ইতিহাস ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির এক নীলাভূমি। যেখানে যে কোন ব্যক্তির মন ছুয়ে যায়। জাপান ভ্রমণ হলো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ।
আরও জানুন সৌদি আরবের ভিসা চেক এবং প্রসেসিং করার খরচ
জাপানে মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য গিয়ে থাকে। অনেকে ব্যক্তি জাপানে ভ্রমণের জন্য গিয়ে থাকে পর্যটক হিসেবে। ২০১৮ সালে জাপানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিন কোটিরও বেশি মানুষ পর্যটক হিসেবে বেড়াতে গিয়েছে।
এছাড়াও জাপান হল বিশ্বের প্রধান শিল্প উন্নত দেশ। ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জাপান যেতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে গুণগত মান এবং অধিক টেকসই পণ্য কিনতে গেলে অবশ্যই জাপানের কোন বিকল্প নেই।
আমাদের এই আর্টিকেলে কিভাবে আপনি জাপান সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে আপনারা মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন জাপানে কিভাবে সহজে যাওয়া যায়।
জাপান সম্পর্কে ধারণা
জাপান হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির চারোদিকে শুধু সাগর আর সাগর। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ রয়েছে তা হল হোনশো, হুক্কাইদো, ক্যুশু এবং শিকোকো। এই বৃহৎ চারটি দ্বীপ জাপানের মূল ভূখণ্ডের 97% আয়তন নিয়ে রয়েছে। জাপানকে ’উদয়মান -সর্যের দেশ’ বলা হয়।
জাপান বিশ্বের জনসংখ্যার দিক থেকে দশম বৃহত্তম দেশ। জাপানের মোট আয়তন ৩,৭৭,৯৪৪ বর্গ কিলোমিটার। জাপানের জনসংখ্যা প্রায় ১২৭ মিলিয়ন। জাপানের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল টোকিও।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়। অন্বেষা সাতচল্লিশ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জাপান এক কেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে থাকে। এদেশের প্রধান হলো সম্রাট। এছাড়াও একটি নির্বাচিত আইনসভা রয়েছে তার নাম হলো কুক্কাই।
আন্তর্জাতিক বৃহৎ সংস্থা জাতিসংঘ, জি ৭, জি ৮, জি ২০ এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এবং জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির একটি দেশ। জাপানের একটি মহা শক্তিধর রাষ্ট্র। জাপানে মাথাপিছু আয় ৩৮ হাজার ২১৬ মার্কিন ডলার। জাপানের মুদ্রার নাম ইয়েন। সরকারি ভাষা জাপানি।
জাপানের পাসপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট। পৃথিবীর যেকোনো দেশে গেলে জাপানের ভিসা প্রয়োজন হয় না। জাপানের নাগরিকরা বিশ্বের যে কোন জায়গায় যেতে পারে ভিসা ছাড়া।
জাপানের ভিসা সমূহ
জাপান বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, পরিদর্শন, জব, মিটিং, কনফারেন্স, উচ্চতর ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ, মেডিকেল ও চিকিৎসা সহ নানা ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে।
জাপানের ভিসা সমূহ কে দুইটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। তা হল স্বল্প মেয়াদে ভিসা এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিসা। আসন জেনে নেই বিভিন্ন ধরনের জাপানে ভিসা সম্পর্কে।
দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা
দীর্ঘমেয়াদী ভিসা হল সেই সকল কাজের যা যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যন্ত জাপানে অবস্থান করা যায়। যেমন- অধ্যয়ন করা, জব করা, পরিবারের সদস্যদের সাথে জাপানে থাকা, হাইলি স্কিলড প্রফেশনাল ভিসা, ম্যারিজ ভিসা ইত্যাদি।
স্টুডেন্ট ভিসা
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ছাত্র ছাত্ররা জাপানে গিয়ে থাকে। জাপানে সর্বোচ্চ মানের পড়াশোনা করানো হয় এবং উচ্চতর ডিগ্রি প্রধান করা হয়। বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণ করে থাকে। স্কলারশিপের মাধ্যমে চতুর ডিগ্রী গ্রহণ করার জন্য জাপানে যেতে চাইলে তেমন কোন বাধা থাকে না।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
যে সকল লোকজন জাপানে কাজ করার জন্য বা জব করার জন্য গিয়ে থাকে তাদের কাজের জন্য যে ভিসা প্রদান করা হয় তার নাম হলো ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। এই বিষয়গুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে তিন থেকে পাঁচ বছর বা আরো বেশি হতে পারে।
প্রতিবছর জাপান সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে থাকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে জাপানের কাজ পেলে এই ভিসাটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে।
মেরিজ ভিসা
কোন ব্যক্তি যদি জাপানে কোনা নাগরিককে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে থাকে তাহলে সে দেশে ফ্যামিলি সদস্য হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা পাবে এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্ব পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোক রয়েছে যারা জাপানিদের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে জাপানে গিয়ে তারা বসবাস করে আসছে।
হাইলি স্কিলড প্রফেশনাল ভিসা
এ ভিসা গুলো সাধারণত উচ্চ লেভেলের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। যারা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছে এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জাপানে কোন কাজে নিয়োজিত হয়ে যায় তাদের জন্য সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
আমরা অনেক সময় দেখে থাকি অনেক ব্যক্তি জাপানে যাই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য তারা সে দেশে গিয়ে ভালো একটি কর্মে নিয়ে যেতে হয়ে যায় আর দেশে আসার চিন্তাভাবনা করে না তখন জাপান সরকার তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রদান করে থাকে।
জাপানের স্বল্প মেয়াদি ভিসা সমূহ
জাপান সরকার বিভিন্ন কাজের জন্য স্বল্প মেয়াদী ভিসা প্রদান করে থাকে। যেমন পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, ট্রানজিট ভিসা, ভ্রমণ, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিষয়ে স্বল্পমেয়াদী ভিসা প্রদান করে থাকে।
ভ্রমণ ভিসা
পৃথিবীর অনেক লোকজন রয়েছে যারা ভ্রমণ পিপাসু। তারা বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলে গিয়ে মনের আনন্দে ভ্রমণ করে থাকে এবং পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে। সে সকল ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কথা চিন্তা করে জাপান এক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলেছে জাপান সরকার।
যত সৌন্দর্য লীলাভূমি রয়েছে জাপান তার অন্যতম। জাপান হল সূর্য উদয়ের দেশ এ দেশে যেতে কার নাম মনটা চাই। তাই পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মানুষ জাপানে ভ্রমণ করে থাকে।
জাপান হচ্ছে ভ্রমণের জন্য নিরাপদ স্থান। পরিচ্ছন্ন শহর, সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্য, নয়নাভি রাম সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক লীলাভূমি এবং অপরূপ শৃঙ্খলার মাঝে জাপান ভ্রমণ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
জাপান ভ্রমণ ভিসার জন্য সাধারণত তিন মাস মেয়াদী ভিসা প্রদান করে থাকে।
বিজনেস ভিসা
যাহারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য জাপানে যেতে চান তাদের জন্য জাপান সরকার ভিসা ইস্যু করে থাকে। এই ধরনের বিষয়গুলো সাধারণত স্বল্প মেয়াদে হয়ে থাকে। জাপান পৃথিবীর শিল্প উন্নত প্রধান দেশ। জাপানের পণ্য বিশ্বের সকল দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।
জাপানে পণ্য ক্রয় করতে গেলে জাপান যেতে হবে এজন্য জাপান সরকার পৃথিবীর সকল নাগরিকদের স্বল্প মেয়াদে ভিসা প্রদান করে থাকে। জাপানে পণ্য ক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির কনফারেন্স মিটিং এবং আলোচনার জন্য জাপানে ভ্রমণ করে থাকে।
ট্রানজিট ভিসা
জাপানকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে ব্যক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকে। অন্য দেশে যাওয়ার জন্য যারা জাপানকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে থাকে তাদের জন্য জাপান সরকার সাময়িকের জন্য ভিসা প্রদান করে থাকে এ সকল ভিসার নাম হল ট্রানজিট ভিসা।
জাপানের ভিসা প্রসেস
বিভিন্ন দেশে কনস্যুলেটের বা দূতাবাস অফিস জাপান সরকারের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে। এ সকল অফিসগুলোর মাধ্যমে জাপানের ভিসা প্রদান করা হয়ে থাকে। জাপানের যেকোনো ভিসা পেতে গেলে অবশ্যই উক্ত দেশের এই অফিসগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।
জাপানের ভিসার জন্য আবেদন করতে চাইলে এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ইন্টারনেটে জাপান ভিসা ফরম লিখে সার্চ দিলে জাপানের একটি ভিসা ফর্ম চলে আসবে এই ভিসা ফর্মটি সম্পন্ন সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ভিসার আবেদন জমা দেয়ার জন্য দূতাবাস অফিসে এসে সকাল ৯ টা থেকে ১১ টার মধ্যে জমা দিতে হবে। আপনার ফাইল জমা দেওয়ার পর আপনার আবেদনের রশিদ কপি সংগ্রহ করতে হবে। আপনার ভিসা আবেদন যদি কোন কারনে রিফিউজ হয়ে যায় তবে অন্তত ছয় মাস পর আপনি পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
জাপানের ভিসা আবেদন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
উপরের এই লিংকটিতে বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক জাপানের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। জাপানের ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পেতে এখানে ক্লিক করুন।
উপরের এই ফর্মটিতে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে দূতাবাস অফিসে জমা দিতে হবে তাহলে আপনি তার জন্য গ্রহণযোগ্য আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন
- জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৩
- দুবাই কোম্পানি ভিসা ২০২৩
- সার্বিয়া কাজের ভিসা ২০২৩
- আমেরিকা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৩
- ইতালি যাওয়ার ভিসা খরচ ২০২৩
জাপানের ভিসা আবেদনের যোগ্যতা
আপনি যদি জাপানের যেকোনো ভাষার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতা থাকতে হবে।
- প্রথমে আপনার আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং এর একটি কপি ডাউনলোড করে জমা দিতে হবে।
- আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং যার মেয়াদ থাকবে কমপক্ষে ছয় মাস এবং আপনার পাসপোর্ট এর বই কমপক্ষে দুইটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যেন জাপানের জন্য জায়গা রাখা হবে।
- আপনার ছবি ২ ইঞ্চি/২ ইঞ্চি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তুলতে হবে। আপনার ছবি হতে হবে সদ্য তোলা ছবির পিছনে আপনার নাম এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
- ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সিং সার্টিফিকেট থাকতে হবে
- স্থানীয় কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যান কর্তৃক চারিত্রিক সনদপত্র
- জাপানি ভাষা শিক্ষা সনদ বা ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে
- ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি থাকতে হবে
- আপনি যে কাজে জাপান যাবেন তার সুস্পষ্ট নথিপত্র থাকতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে কথা বলতে চাই আপনি যদি জাপান যেতে চান যে কাজে যেতে চান না কেন, আপনাকে প্রথমে জাপানে যাওয়ার পেশার জন্য ফরম পূরণ করতে হবে এবং অনলাইনে আবেদন করতে হবে সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনাকে ভিসাপ্রদান করা হবে।
তবে জাপান যাওয়ার জন্য আপনি কোন দালাল চক্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন না কারণ অনেক প্রতারক চক্র রয়েছে যারা আপনার সর্বনাশ করতে পারে। জাপানে আপনি যে কাজে যেতে আগ্রহী হয়েছেন সে ভিসার আবেদন করে আপনাকে দূতাবাসে যোগাযোগ করে জাপান যেতে পারবেন।
ট্যাগঃ
জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩ জাপান ভিসা প্রসেস ২০২৩