মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল

“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” এই প্রবাদটি আমরা সকলেই শুনেছি। আসলে স্বাস্থ্য ভালো রাখার মধ্যেই সুখের অনুভূতি পাওয়া যায় তবে স্বাস্থ্য বলতে শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য কেই বোঝায় না বরং মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেকেই স্বাস্থ্য বলতে শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের কথাই বুঝে থাকি।

আমরা মনে করি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারলেই হয়তো স্বাস্থ্য ভালো থাকে কিন্তু শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও অত্যন্ত জরুরী। শরীর সুস্থ থাকলে মানসিকভাবে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার জীবন যাপন অত্যন্ত ব্যাহত হবে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সকলের যত্নবান হওয়া উচিত।

আমাদের এই আর্টিকেলে কিভাবে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা ঠিক রাখা যায় তার কিছু কৌশল ও নিয়ম নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাইলে আমাদের কিছু নিয়ম নীতির আওতায় আসতে হবে। অল্প কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে পারলেই আমরা মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করতে পারব এবং সুস্থ থাকতে পারবো।

মানসিক সুস্থতা পারে মানুষের মনে শান্তি ও প্রফুল্ল আনতে। সুস্থ দেহ সুস্থ মন এ নিয়েই হচ্ছে আমাদের আনন্দের জীবন যাপন। তাহলে আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায় তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি সম্পন্ন ভালোভাবে পড়বেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মানসিকভাবে খুবই ভালো থাকতে পারবেন।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশলঃ

সুস্বাস্থ্য বলতে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা কে বোঝায়। আমরা শরীরের প্রতি যত্নবান হলেও অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করি না। আমাদের প্রতিদিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

মানসিকভাবে আমরা সুস্থ থাকতে পারলে আমরা নিজেকে সুস্বাস্থ্যবান হিসেবে ধরে নিতে পারব। আসলে কর্মব্যস্ততার জীবনে কখন যে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি তা টেরও পাচ্ছি না। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল জানা আমাদের খুবই প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে, ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকেয়েট্রিতে প্রকাশিত ’কান্ট্রি পেপার অন মেন্টাল হেলথ-বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ১৮.৭ শতাংশ মানুষ নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত । প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারীর কারণে মানসিক রোগের ব্যাপকতা আরো বেড়েছে।

আরও জানুন স্বাস্থ্য ভালো রাখার সহজ উপায়

নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিজেকেই পালন করতে হবে। মানসিক রোগ যেন বাসা না বাঁধে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার জীবন যাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে সব মানসিক সমস্যা দূরে ঠেলে মনকে ফুরফুরে করে তুলতে পারেন । আসুন কয়েকটি নিয়ম মেনে চলি আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকি।নিম্নে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল দেওয়া হল-

১। নিরাপদ/পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ 

ভেজাল মুক্ত খাবার কে নিরাপদ বা পুষ্টিকর খাবার বলা হয়। অর্থাৎ যে খাবারে কোন রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন , কিট, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সহ কোন ক্ষতিকর দ্রব্য থাকেনা তা হল নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরের জন্য নয়, মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্যও অত্যন্ত উপকারী।

বিশেষ করে আপনি সব সময় সুষম খাবার গ্রহণ করবেন। যদি আপনার মেজাজ খিটখিটে, হতাশা বা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন তাহলে কফি খাওয়া আপাতত ছেড়ে দিতে পারেন।

আরও জানুন  শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

২। ধূমপান ও মাদক পরিহার করুন

অনেকেই বিষন্নতায় বা হতাশ হয়ে অ্যালকোহল ও মাদকের উপর নির্ভর হয়ে পড়েন। এগুলো হতাশা কাটায় না বরং শরীর ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদক সেবনে শরীরের থায়ামিনের ঘাটতি হতে পারে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

থায়ামিন এর ঘাটতি হলে মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি হারানো, চোখের সমস্যা হতে পারে। ধূমপানে প্রচুর নিকোটিন থাকে ইহা শরীর ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। কাজেই মাদক মুক্ত জীবন গড়ুন।

৩। নিয়ম মাফিক চলুন

দৈনিক কাজের ক্ষেত্রে সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই শেষ করুন। নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া-ঘুম, ঘুম থেকে ওঠা, নানাবিধ বিষয়গুলো মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নিয়ম মেনে চলেন তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার হার অনেক বেশি।

৪। ব্যায়াম করুন

শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় বিশেষ করে সকালে বা রাতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করবেন। আপনি নিয়মিত হাটাহাটি ও শারীরিক পরিশ্রম করেও সুস্থ থাকতে পারেন।

৫। দুশ্চিন্তা করবেন না

সবার জীবনেই কাজের চাপ, নানা ধরনের সমস্যা আসতে পারে  এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা একদম ঠিক নয়। সমস্যা সমাধানে আপনাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া যাবে না।

সমস্যা সমাধানের জন্য দৈনন্দিন জীবন যাপনে একটি তালিকা তৈরি করুন। দুশ্চিন্তা থাকলে আপনার ঘুম কম হবে। কাজেই দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন এবং সমস্যা সমাধানে একটি ফলপ্রসূ উপায় বের করুন।

৬। সকালে সূর্যের আলো

সূর্যালোকে ভিটামিন রয়েছে । ভিটামিন ডি শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান ।এটি মস্তিষ্কের ক্ষতিকর প্রভাব দূর করে। ফলে মন মেজাজ আরও উন্নত হয়। প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দুই ঘন্টা সূর্যের আলোতে থাকুন, তবে দীর্ঘ ক্ষণ রোদে থাকা ঠিক নয়।

৭। মিশুক হতে চেষ্টা করুন

মিশুক হওয়ার চেষ্টা করুন বন্ধু- বান্ধব বা সহপাঠীদের সাথে যখনই দেখা হয় প্রাণ খুলে কথা বলার চেষ্টা করুন। প্রাণ খুলে কথা বলতে পারলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। তাই আত্মীয় বা কাছের মানুষদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান এবং মিসুক হওয়ার চেষ্টা করুন।

৮। অন্যের উপকার করুন

পরোপকার মহৎ কাজ। অন্যের উপকার করে মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করুন। আপনার নিকটস্থ যেসকল গরিব, অবহেলিত, নিপীড়িত ,অসহায়, দুঃস্থ লোকজন রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ান আপনার সাধ্য অনুযায়ী। অন্যের উপকার করে আপনি মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারবেন।

৯। অন্যের সাহায্য নিন

আপনি হতাশা, বিপদগ্রস্ত বা কোন অসহায়ত্ব বোধ করলে অন্যের সাহায্য নিন। বিশেষ করে আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীর সাহায্য নিতে পারেন। তাহলে আপনি দ্রুত মানসিকভাবে স্বস্তি ফিরে পাবেন।

১০। ভ্রমণ করুন

আপনার কর্মব্যস্ততার ফাঁকে যখনি সময় পান আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট স্থানে ভ্রমণ করুন । প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘুরে আসুন। দেখবেন আপনি মানসিকভাবে অনেক প্রশান্তি লাভ করেছেন।

১১। ঘুমান

আপনি প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা নিয়মিত ঘুমাতে চেষ্টা করুন। ঘুম মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই রাসায়নিক পদার্থ গুলো আমাদের মন-মেজাজ, আবেগ পরিচালনা করে।

১২। ধর্মীয় অনুশাসন

যার যার ধর্মীয় হুকুম আহকাম ও রীতিনীতি মেনে চলুন। তাহলে আপনি মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করবেন। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে উল্লেখ রয়েছে ক্ষণস্থায়ী জীবনের কথা চিন্তা না করে পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

আল্লাহর দেওয়া হুকুম-আহকাম এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরিকায় জীবনযাপন করুন। তাহলে আপনি ইহকালে ও পরকালে ভালো থাকতে পারবেন এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায়, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে উপরের বিষয়গুলো প্রতি একটু গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আমরা শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সম্পূর্ণরূপে সুস্থ থাকব বলে আশা করা যায়। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

আরও জানুন

ট্যাগঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *