পেঁপে চাষের সঠিক পদ্ধতি
পেঁপে বাংলাদেশ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। আমাদের দেশের সর্বত্রই চাষ হয় বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পেঁপে গাছ রয়েছে। পেঁপে বাণিজ্যিকভাবেও চাষাবাদ হচ্ছে অনেক অঞ্চলে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী মানুষের কাছে এটি একটি সুস্বাদু ফল হিসেবেই পরিচিত। পেঁপে খাওয়া পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
বাণিজ্যিকভাবে চাষ আবাদ করলে খুব সহজেই অধিক পরিমাণে লাভবান হওয়া সম্ভব। পেঁপে কাঁচা এবং পাকা উভয় প্রকারের চাহিদা রয়েছে সারাদেশ ব্যাপী। পেঁপে চাষের সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই অধিক পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইট আসল পথ ডট কম এর মাধ্যমে চাষের সঠিক পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে পেঁপে চাষ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন।
পেঁপে চাষের সঠিক পদ্ধতিঃপেঁপে আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। কাচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কৃমির সংক্রমণ রোধ করে, আলসার, ত্বকে ঘা দূর করে, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী। পেঁপে রোগীদের পথ্য হিসেবে খেতে দেওয়া হয়।
পেপে আমাদের দেশে সব জায়গায় চাষ করা যায়। আমাদের দেশের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু পেঁপে চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আপনি বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন । আসুন জেনে নেই পেঁপে চাষের সঠিক পদ্ধতি
পেঁপে চাষের সঠিক পদ্ধতি
জমি নির্বাচন
- পেঁপে চাষের জন্য বেলে -দোআঁশ মাটি অধিক উপযোগী।
- মাঝারি বা উঁচু শ্রেণীর উর্বর জমি পেঁপে চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
পেঁপের জাত
- কাশিমপুরী পেঁপে
- শাহী পেঁপে
- যশোরী পেঁপে
- সংকর জাতের পেঁপে
- হানিডিউ পেঁপে
- বলুস্টিম পেঁপে
- রাচি পেঁপে
চারা রোপণ
- ৫০-৬০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে,
- ৬ ফুট অন্তর অন্তর ৬০X৬০X৬০ সে.মি আকারের গর্ত করতে হয়,
- চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের ভিতর মাটির সাথে জৈব সার মেশাতে হবে,
- প্রতি গর্তে তিনটি চারা রোপণ করতে হবে,
- ফুল আসলে একটি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে,
- পরাগায়নের সুবিধার জন্য প্রতি বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
- এপ্রিল মাস পেঁপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে পেঁপের চারা রোপণ করা যায়।
পরিচর্যা
- পেঁপে বাগানে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে,
- গাছ যাতে ভেঙ্গে না পড়ে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে,
- একটি বোটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে,
- পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে. মি নালা রাখতে হবে,
- শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচ দিতে হবে,
- বর্ষাকালে পানি দ্রুত বের করে দিতে হবে,
- গাছের শিকড় যেন বের হয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে,
- গাছ হলুদ বর্ণ ,পাতা কোঁকড়ানো বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দিলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ ও রোগবালাই দমন
গুণগত মানসম্পন্ন ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ ভালো থাকে। জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার যথাঃ- ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ব্যবহার করতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দেখা দিতে পারে, এই জন্য উপযুক্ত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিস অথবা ইউনিয়ন পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে।
ফল সংগ্রহ
পেঁপে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে পাকা হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে। পেঁপের চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই ফল আসে এবং ফল ধরার তিন মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। পেঁপে প্রায় সারা বছর গাছে ফল দেয়। পেঁপে কাঁচা ও পাকা দুই ভাবেই সংগ্রহ করা যায়।
১ টি গাছ থেকে বছরে 100 থেকে 120 কেজি পেঁপে উত্তোলন করা যায়। বারোমাসি পেঁপে গাছ থেকে বছরে চারবার উত্তোলন করা যায়।
ফল বিক্রয়
কাঁচা এবং পাকা উভয় ভাবেই পেঁপে উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। কাঁচা ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাজারে যা সবজি হিসেবে ক্রেতারা গ্রহণ করে থাকে। আর পাকা পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু ফল হিসেবে আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাকা পেঁপে রোগীর পথ্য হিসেবে ও সর্বজনের নিকট গ্রহণ যোগ্য। কাঁচা ও পাকা উভয় ভাবেই বিক্রি করে প্রচুর পরিমানে আয় করা যায়।
আরও জানুন
- শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
- মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল
- কিভাবে শুরু করবেন অনলাইন ইনকাম
- ৫জি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ
- ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে বিস্তারিত এখানে
- কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- মোবাইল থেকে ইনকাম করার সহজ উপায়
- ঠোঁট, হাত ও পায়ের গোড়ালি ফাটা থেকে বাঁচার উপায়
- ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায় [আসল পথ]
- পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি
পেপের উপকারিতা
- কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম রয়েছে। এছাড়াও কেমোপেইন,পাইপাইন ও প্যাপিনের মত উপাদান রয়েছে। যা কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি দূর করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ডায়রিয়া ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
- পেঁপে খেলে ব্রন ও ত্বকের নানা সমস্যা দূর হয় এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
এ ছাড়াও কাঁচা পেঁপে অস্টিও আর্থারাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগের উপকার করে এবং হার্টকে ভালো রাখতে অনেক সাহায্য করে।
পরিশেষে
প্রিয় খামারি ভাইয়েরা, আপনারা পেঁপে চাষে অত্যান্ত লাভবান হবেন। কারণ পেপে সারাবছর উৎপাদন করা যায় এবং সারা বছর ভোক্তাদের কাছে পেঁপের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। সব সময় চেষ্টা করবেন বারোমাসি পেঁপে চাষ করতে। বারোমাসি পেঁপে চাষে সারাবছর পেঁপে উত্তোলন করা সম্ভব।