পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি

পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি

পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি

পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতিঃ বাংলাদেশে যত প্রকার ফল রয়েছে এর মধ্যে পেয়ারা হল অন্যতম সুস্বাদু  ও পুষ্টিকর। পেয়ারা বাংলাদেশের ফল না হয়েও ফলের বাজারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে । দেশের প্রায় সব গৃহস্থের বাড়িতে দুই একটা পেয়ারা গাছ দেখা যায়। তবে ইতিমধ্যে পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ দেশব্যাপী অত্যন্ত সফলতা  বয়ে এনেছে। উন্নত জাতের পেয়ারা গুলো বাণিজ্যিক চাষের মাধ্যমে পেয়ারা চাষীরা অর্থনৈতিক ভাবে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে, তেমনি দেশের মানুষের ফলের চাহিদা পূরণেও অত্যন্ত সফল হয়েছে। আসুন জেনে নেই পেয়ারা চাষে আপনি কিভাবে সফল হবেন-

পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি
পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি

পেয়ারার উৎপত্তি

পেয়ারার আদিনিবাস বা উৎপত্তিস্থল হল আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে মেক্সিকো , পেরু। প্রায় ২ হাজার বছর পূর্বে পেয়ারা চাষাবাদ শুরু হয়। এবং পরবর্তীতে স্পেনিশ, পর্তুগিজ এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এশিয়ার দেশসমূহে ব্যাপকহারে পেয়ারা চাষ হচ্ছে।

পেয়ারা চাষের উন্নত পদ্ধতি

বাংলাদেশে পেয়ারা চাষ বর্তমানে ব্যাপক হারে হচ্ছে । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পেয়ারার জাত গুলো বর্তমানে বাংলাদেশের সব জায়গায় চাষ হচ্ছে। পেয়ারা উৎপাদনের দিক থেকে ২০১১সালের তথ্য মতে বিশ্বে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৭৯৪ একর জমিতে ২,১৪,৩০৮ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

মাটি

বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে পেয়ারা চাষ করা সম্ভব। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ , দোআঁশ মাটি থেকে ভারী এঁটেল মাটি যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা আছে, সেখানে পেয়ারা চাষ করলে অত্যন্ত ভালো হয়। যে মাটিতে PH 4.5 – 8.2 রয়েছে সেখানে পেয়ারা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তবে লবণাক্ত মাটিতে পেয়ারার ওজন ও গুনাগুন কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া

বাংলাদেশের পেয়ারা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু পেয়ারা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পেয়ারা চাষ করা সম্ভব। পেয়ারা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ২৩ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট।

বাছাই

পেয়ারা চাষ নির্ধারণের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি পেয়ারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে । তাদের মধ্যে অন্যতম হলো-

  • পেয়ারা বারি-৪,(বীজমুক্ত)
  •  থাই পেয়ারা -৫
  • থাই পেয়ারা- ৭

চারা রোপনের দূরত্ব

  • চারা রোপণের অন্তত এক মাস আগে ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৫০ সেন্টিমিটার চওড়া গর্ত খনন করতে হবে।
  • প্রতিটি গর্তের দূরত্ব হবে ১২ ফুট X ১২ ফুট অথবা ৯ ফুট X ৯ফুট।

জৈব সার

  • প্রতিটি গর্তে চারা রোপণের চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ পূর্বে ৪০ থেকে ৫০ কেজি পচা গোবর সার, ১৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে রাখতে হবে।
  • গাছের বয়স পাঁচ বছর  হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বছরে প্রতিটি গাছে পচা গোবর ২০ থেকে ২৫ কেজি, ইউরিয়া ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম, ও এমওপি ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  • গাছের বয়স ৫ বছর পূর্ণ হলে ইউরিয়া সার ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম, ৪৫০ থেকে ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, টিএসপি ৪৫০ থেকে ৫৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখিত সারের পরিমাণ সমান দুই ভাগে ভাগ করে বছরে দুইবার ফেব্রুয়ারি-মার্চ এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রয়োগ করতে হবে।
  • জিংকের অভাবে পাতার শিরায় ক্লোরোসিস দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৮০ লিটার পানিতে ৪০০ গ্রাম জিংক ও ৪০০ গ্রাম চুন মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • প্রয়োজন হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

চারা রোপণের ৪/৫ বছরের মধ্যে ভালো ফলন পাওয়া যায়। পেয়ারা বারি-৪ যেহেতু কলমের গাছ, তাই চারা রোপণের পরের বছর থেকে ফল আসবে। তবে গাছের বৃদ্ধি সঠিক রাখতে প্রথম বছর ফল না রাখাই ভালো। দ্বিতীয় বছর থেকে গাছে ফল রাখতে হবে।

এপ্রিল-মে ও জুন-জুলাই মাসে বারি-৪ পেয়ারার গাছে ফুল আসে এবং নভেম্বর-অক্টোবর মাসেও কিছু ফুল আসে। আর ফুল আসার তিন-চার মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়।

বারী -৪ পেয়ারা যখন সবুজ থেকে হলুদ ধারণ করেন তখন ফল আহরণ করা হয়। অর্ধ পাকা ফল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তবে বৃষ্টির সময় ফলের মিষ্টতা কিছু কমে আসে।

আরোও পড়ুন

 উৎপাদন

তিন বছরের একটি পেয়ারা গাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এবং প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০ থেকে ৫০ টন।

তবে গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন আরোও বাড়তে থাকে।

পুষ্টি উপাদান বেশির ভাগ পানি,

অম্ল,শ্বেতসার,

পেকটিন,খনিজ পদার্থ,

ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,

থায়ামিন,ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।

উপকারিতা

  • পেয়ারায় প্রচুর ফাইবার আছে, যা শরীরে চিনি শোষণ করে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
  • পেয়ারায় আছে ভিটামিন সি, যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পেয়ারায় আছে ভিটামিন ‘এ’ যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • পেয়ারা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার ভয় কমে। এই ফলের আছে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।
  • পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও সর্দি কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয়সহ পেটের অসুখ সারাতে উপকার করে।

আপনি কৃষি ফসল উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে, পেয়ারা চাষে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারবেন। কাজেই আপনার বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাড়ির  আসে-পাশে যে সকল পতিত জমি রয়েছে এই জমিগুলো পেয়ারা চাষের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন।

অথবা জমি না থাকলে অন্যের জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা চাষে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *