এইচএসসি পরীক্ষা/২২ অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র(বাংলাদেশের শিল্প)

এইচএসসি পরীক্ষা/২২ অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র(বাংলাদেশের শিল্প)

 

প্রশ্ন১ঃ শিল্প কাকে বলে?

উত্তরঃ শিল্প হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক দ্রব্য এবং মাধ্যমিক দ্রব্যকে চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন২ঃ ফার্ম কি?

উত্তরঃ ফার্ম হল শিল্পের একক। যে কারখানায় অনুসৃত উৎপাদন পদ্ধতির অধীনে সংগৃহীত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে একটি দ্রব্য উৎপাদিত হয় তাকে ফার্ম বলে।

প্রশ্ন৩ঃ কুটির শিল্প কাকে বলে?

উত্তরঃ নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বল্প মূলধন ও সহজলভ্য কাঁচামাল এবং ছোটখাটো সাধারণ যন্ত্রপাতির দ্বারা যে শিল্প পরিচালিত হয় তাকে কুটির শিল্প বলে।

প্রশ্ন৪ঃ হাইটেক শিল্প কি?

উত্তরঃ উচ্চ প্রযুক্তি ভিত্তিক, জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর, পরিবেশবান্ধব এবং আইটি বা গবেষণা ও উন্নয়ন নির্ভর শিল্পকে  হাইটেক শিল্প বলা হয়।

প্রশ্ন৫ঃ ক্ষুদ্র শিল্প কি?

উত্তরঃ যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে প্রতিস্থাপন স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫০ লাখ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৫ থেকে ৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে সেসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

প্রশ্ন৬ঃ অতি ক্ষুদ্র শিল্প বলতে কি বুঝ?

উত্তরঃ যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমি এবং কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন সহ ৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠানে ১০ জন থেকে ২৪ জন বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

প্রশ্ন৭ঃ রপ্তানিমুখী শিল্প কি?

উত্তরঃ যে সকল শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যায় সে শিল্প গুলোকে রপ্তানি মুখী শিল্প বলা হয়।

প্রশ্ন৮ঃ আমদানি বিকল্প শিল্প কি?

উত্তরঃ আমদানি যোগ্য দ্রব্য অন্য দেশ থেকে আমদানি না করে, দেশে উৎপাদনের জন্য যে শিল্প গড়ে তোলা হয় তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলা হয়।

প্রশ্ন৯ঃ পিপিপি কি?

উত্তরঃ কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণ করাকে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব বলা হয়(PPP= Public Private Partnership)।

প্রশ্ন১০ঃ সংরক্ষণ শিল্প কি?

উত্তরঃ যেসকল শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর, অসংবেদনশীল হিসেবে সরকারি বিনিয়োগের জন্য সরকারের নির্দেশ মোতাবেক সংরক্ষণ করা হয় সেসব শিল্পকে সংরক্ষণ শিল্প বলা হয়।

প্রশ্ন১১ঃ শিল্পনীতি কি?

উত্তরঃ শিল্প খাত ও শিল্প উন্নয়নের সাথে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক কিরূপ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাথে শিল্প কীভাবে সম্পর্কিত এ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালাকে শিল্পনীতি বলে। আরও জানুন এইচএসসি পরীক্ষা/২২ অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র(বাংলাদেশের কৃষি)

অনুধাবনমূলক প্রশ্নঃ

প্রশ্ন১ঃ অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে পার্থক্য দেখাও ?

 উত্তরঃ অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেয়া হলঃ

  • যেসব শিল্প কুটির শিল্প থেকে অপেক্ষাকৃত বড় এবং যেখানে মালিক ও পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও চুক্তির ভিত্তিতে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করা যায় তাকে অতি ক্ষুদ্র শিল্প বলে। অপরদিকে, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বল্প মূলধন, কম শ্রমিক ও ছোটখাটো যন্ত্রপাতি নিয়ে কোন একটি দ্রব্য উৎপাদন করে সেগুলো কে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।
  • শিল্পনীতি ২০১০ অনুযায়ী অতি ক্ষুদ্র শিল্পের মূলধন ৫লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং ১০ জন থেকে ২৪ জন শ্রমিক কাজ করে। অপরদিকে, শিল্পনীতি ২০১০ অনুযায়ী ক্ষুদ্র শিল্পের মূলধন ৫০ লাখ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা এবং ২৫ থেকে ৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে।

প্রশ্ন২ঃ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য?

উত্তরঃ কুটির শিল্প পারিবারিক মালিকানায় পরিচালিত হয়। আর ক্ষুদ্রশিল্প পারিবারিক মালিকানা ছাড়াও অংশীদারিত্বের মালিকানায় পরিচালিত হয়। কুটির শিল্পের প্রয়োজনীয় পুজি পারিবারিক  উৎস থেকে আসলেও ক্ষুদ্র শিল্পে তা মালিক ছাড়াও বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা থেকে সংগৃহীত হতে পারে। তাছাড়া, কুটিরশিল্পে হালকা যন্ত্রপাতি ও দেশজ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পে আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি ও দেশে-বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। তাই বলা যায়, ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হল পরিচালনা পদ্ধতি ও মূলধন সংগ্রহ।

প্রশ্ন৩ঃপাটশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল – ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ সম্প্রতি উন্নত জাতের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উদ্ভাবন, পাটের বিকল্প পণ্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে নতুন করে পাট শিল্পের সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পাটের বিকল্প ব্যবহার আবিষ্কৃত হওয়ায় এর চাহিদা কমে গিয়েছিলো কিন্তু বর্তমানে আবার নতুন করে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে পাট দ্বারা বিভিন্ন উন্নত রুচিশীল পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা মাদুর ইত্যাদি । এর সকল পণ্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। তাই পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

প্রশ্ন৪ঃ ফার্ম কি শিল্প হতে পারে?

উত্তরঃ কয়েকটি ফার্ম যদি সমন্বিত হয় তবে শিল্প হতে পারে। একই ধরনের সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী ফার্মসমূহের সমন্বিত রূপ কে শিল্প বলা হয় ।অর্থাৎ শিল্প হল একই ধরনের দ্রব্য প্রস্তুতকারী বিভিন্ন ফার্মের সমষ্টি । ফার্ম এককভাবে শিল্প হতে পারেনা। শিল্প হতে হলে অনেকগুলো ফার্মের সমষ্টি হতে হয় । তাই বলা যায়, কোন ফার্ম যদি সমন্বিত রূপ লাভ করতে পারে তবেই শিল্প হতে পারে। তবে একচাটিয়া ফার্মের ক্ষেত্রে ফার্মকে শিল্প বলা যায়।

প্রশ্ন৫ঃ শিল্প ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় – ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সাধারণত যেসকল শিল্প জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট , মৌলিক ও ভারী শিল্প সরকারিখাতে পরিচালিত হয় । অন্যদিকে বেসরকারি খাতে পরিচালিত শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবামূলক শিল্প। আর বাংলাদেশের কুটির শিল্প সাধারণত স্বল্প মূলধনী, সহজলভ্য কাঁচামাল ও সাধারণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে পারিবারিক পরিবেশে পরিচালিত হয় । তাই বলা যায়, বাংলাদেশের শিল্প ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন৬ঃ সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তরঃ সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব শিল্প ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি মূলধন সংকট থাকায় বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP)এর আওতায় বৃহদায়তন শিল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা খুবই সহজ। কারণ সহজেই পর্যাপ্ত পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করা যায়। তাছাড়া ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা কাটিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গতিশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় ।এতে শিল্পোন্নয়নের গতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন৭ঃ স্বনির্ভরতা অর্জনে শিল্পোন্নয়ন জরুরি কেন?

উত্তরঃ বর্তমানে বাংলাদেশেকে বিপুল পরিমাণ শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এজন্য আমাদের বিপুল অঙ্কের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে থাকে । দেশকে শিল্পায়িত করা গেলে প্রয়োজনীয় শিল্পজাত দ্রব্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তাই শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করলে বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। এতে পর্যায়ক্রমে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এইজন্য দেশের নির্ভরতা অর্জনে শিল্পায়ন জরুরী।

প্রশ্ন৮ঃ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দেশে সুষম উন্নয়ন ঘটায় -ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাম অঞ্চলে প্রসার লাভ করলে সুষম উন্নয়ন সম্ভব।কারণ বৃহৎ শিল্প শুধু শহরকেন্দ্রিক স্থাপনের ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধান বৃহৎ শিল্প গুলি হল- পাট শিল্প,চা শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্প সাধারণত শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে । ফলে গ্রামের সাধারণ পরিবারের লোকজনেরা এসব শিল্পে কাজ করার সুযোগ কম পায়। এ দিক থেকে চিন্তা করলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কারখানাগুলো গ্রাম অঞ্চলে ও শহরে উপকণ্ঠ স্থাপিত হয়ে থাকে। যা অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সুষম উন্নয়ন ঘটায়

প্রশ্ন৯ঃ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কুটির শিল্পের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে – ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ স্বল্প পুঁজি ও পারিবারিক পরিবেশে কুটির শিল্প স্থাপন করা যায় বলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যখন স্বল্প মূলধন এবং পারিবারিক সদস্যসহ সর্বোচ্চ ১০ জন শ্রমিক নিযুক্ত থাকে তখন তাকে কুটির শিল্প বলে। ঘরোয়া পরিবেশে অল্প জায়গায় এই শিল্প স্থাপন করা যায়। তাই শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যেকোনো লোকই সামান্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে খুব সহজেই কুটির শিল্প স্থাপন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন১০ঃ নারীর ক্ষমতায়নে গার্মেন্টশিল্প কি ভূমিকা পালন করছে?

উত্তরঃ গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ৮৫% থেকে ৯০%মহিলা শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই এতদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাহিরে ছিল। গার্মেন্টশিল্প গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ।এই বহু সংখ্যক নারী শ্রমিককে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যা নারীর ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *